একনজরে

জীবন নিরানন্দময়,তাই প্রতিদিনের সকল ব্যস্ততার পর আমরা একটু হাসির খোরাক খুঁজি।নির্মল হাসি।এমন একটি হাসির শ্রুতি নাটক রইলো এখানে।এটি কোনো কপি পেস্ট নয়,নিজেরই রূপান্তরিত নাটক।

চরিত্রলিপি

দুর্গা

শিব

নন্দী

ভৃঙ্গী

অশ্বিনীকুমার

ডাক্তার

শিবের ডাক্তারি

নাট্যরূপান্তর—মানিক করণ

মূল রচনা:হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

নাটক

দুর্গা: (ঘুম জড়ানো গলায়,হাই তুলতে তুলতে)নাও আবার শুরু হোলো।আর ভাল্লাগে না বাপু,সারাটা দিন গুচ্ছের কাজ করে যেই একটু চোখের পাতা এক করলাম,সেই শুরু হোলো প্যানপ্যানানি। দূর ছাই..(মনে মনে গজ গজ করে  দুর্গা)শরীর ঠিক থাকবে কি করে। নিয়মের বালাই নেই। দিনরাত নেশাভাং করছেন। বারণ করলেও কথা কানে তোলেন না।

(অগত্যা কি করেন ,উঠে যান শিবের কাছে শিবকে ঠেলা দেন,একটু যেন রাগও কাজ করে গলায়)

 দুর্গা :কি ব্যাপার,বলি কি হোলো কি? অমন করছ কেন? কি কষ্ট হচ্ছে?

(শিব ধড়মড় করে উঠে বসলেন।)

শিব: কে? কে? অ! দুর্গা..

(দু’ হাতে পেটটা চেপে ধরলেন)

শিব:কিছু বুঝতে পারছি না গো, রাত থেকে পেটটা বড্ড ব্যথা করছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন।

দুর্গা :(দুর্গা বিস্ময়ের সুরে বলেন)সে কি গো? কি আবার বাধালে বলোতো!

(তারপর যেন কি মনে পড়তে খেঁকিয়ে ওঠেন)

দুর্গা:এত করে বলি গাঁজার মাত্রাটা একটু কমিয়ে দাও।না, সে তো শুনবে না।আমার কথা শুনবেই বা কেন!আমি কি আর ভালো কথা বলি কখনো! তাছাড়া যেমন হয়েছে তোমার নন্দী-ভৃঙ্গী। গাঁজার সঙ্গে কি মেশাচ্ছে কে জানে। দেখ তো! আমাকেই তো এখন ভুগতে হবে। আমি যে এখন কি করি।

শিব: (কাতরাতে কাতরাতে) উঃ আঃ!  ও গিন্নী কিছু একটা তো কর। আর যে পারছি না,বড্ড কষ্ট হচ্ছে গো, (শিব যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন।)

দুর্গা: কি করি! কি যে করি! (বলতে বলতে দরজা খুললেন) হাঁক দিলেন,নন্দী-ই-ই-ই… নাঃ হতচ্ছাড়ারা যে কোথায় থাকে কে জানে।ও বাছারা কোথায় গেলি রে… ও ভৃঙ্গী-ই-ই-ই। আয় নারে বাছারা।আর পারিনা বাপু।কোনো কাজের সময় যদি এদের পাওয়া যায়! ওরে বাবা! যা ঠান্ডা ,বাইরে থাকাই দায়।কৈলাসে এবছরই কি বেশি ঠান্ডা পড়লো! 

(ঠান্ডায় কাঁপতে থাকেন দুর্গা)

দুর্গা: না! এদের পাওয়া যাবে না।চারিদিকে তো এতো বরফ,একটু বরং বরফ নিয়ে নিই ওনার জন্য।ব্যস্ ব্যস্, বরফের এই চাঁইটা নিলেই হবে।এ-এ-এই হয়েছে।

(বরফ নিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরে এলেন,গেলেন সোজা রান্না ঘরে)

দুর্গা: একটা থালা নিয়ে নিই,না হলে জল গড়াবে চারিদিকে। 

শিব: কি হোলো গিন্নী ,ও গিন্নী কিছু একটা তো করো।আর পারছি না,বড্ড কষ্ট,কি যন্ত্রণা… আঃ…

দুর্গা: (ঘরে এলেন)এই আসছি রে বাবা! কি যে করি,আমার হয়েছে বড্ড জ্বালা।

(একটা বরফের চাঁই ভেঙে শিবের পেটে ঘষতে লাগলেন।)

দুর্গা: এই নাও।দেখি কোথায় ব্যথা,এই বরফটা একটু লাগিয়ে দিই।আরে গেঞ্জিটা তোলো।

শিব: এ- এ-এ কি করছো গিন্নী মারবে নাকি! আঃ কি ঠান্ডা গিন্নী! এই ঠান্ডায় আবার বরফ…আমার গণেশ,কার্তিক কে একটু ডাকো না।

দুর্গা: অ্যাঁ, আদিখ্যেতা। বাচ্চাদের ডাকো এখন।বলি, তাদের খবর তুমি কিছু রাখো।অ্যাঁ।সব জ্বালা তো আমার।

শিব: গিন্নী,আবার শুরু করলে, আমার যে কি যন্ত্রণা হচ্ছে, আঃ। একবার ডাকোই না।

দুর্গা: মানে কি? অ্যাঁ মানে কি? “কি শুরু করলে” মানেটা কি? আমার কি রাত দুপুরে শখ হয়েছে।অ্যাঁ।

আমার ছেলে-মেয়েরা কেউ কাছে নেই। তুমি কি খবর রাখো,পৃথিবীতে চারদিকে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠেছে, কার্তিক সেখানে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। গণেশ বেচারার তো একটুও সময় নেই। ব্যবসায়ীদের খাতাপত্র,হিসেব  নিয়ে ব্যস্ত।কিসব নাকি ইনকাম-ট্যাক্সের হাঙ্গামা। লক্ষ্মী-সরস্বতী শ্বশুরবাড়ি।বলি, কাকে ডাকবো এখন।তোমার দুই ছায়াসঙ্গী, নন্দী-ভৃঙ্গীও যে ভাং খেয়ে কোন্ গুহায় পড়ে আছে তার ঠিক নেই।দ্যাখো,একটু ভোর না হলে কিছুই করা যাবে না।

(সকাল হলো কিন্তু শিবের পেটের যন্ত্রণা কমল না।

একটু বেলা হতে নন্দী-ভৃঙ্গী এসে হাজির।)

দুর্গা: (বিরক্ত হলেন, তারপর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন)কোথায় থাকিস বল দেখি বাছারা।হতচ্ছাড়া সব, বাড়িতে এমন একটা বিপদ, তোদের দেখা নেই।

নন্দী: (কাচুমাচু হয়ে উত্তর দিল) হয়েছে কি মাঠাকরুন…

দুর্গা: থাক আর বলতে হবে না,তোদের কি কাজ আমার জানা আছে।তোরা যে কত্ত কাজের, সেও আমার জানা আছে।

ভৃঙ্গী:(বুঝলো মাঠাকরুণ চটে আছে।তাই ভনিতা না করে চটপট বললো) নিমের ডালের খোঁজে একটু নেমে গিয়েছিলাম, তাই আসতে দেরি হলো। ঠাকুর সকালে নিমের দাঁতন করবেন বলেছিলেন।

দুর্গা:(এখন আর রাগ নেই ,হতাশা আছে গলায়)আর দাঁতন(দুর্গা দুটো হাত ওলটালেন)পেট থাকলে তো দাঁত। এই, এদিকে শোন্। আমায় একটা সত্যি কথা বলতো।

নন্দী-ভৃঙ্গী:(প্রমাদ গুণলো,ভয়ার্ত গলায় বললো)হ্যাঁ ,হ্যাঁ বলুন না।সত্যি বলছি,একটাও মিথ্যে কথা বলবো না।

দুর্গা : চোপ্।একদম চোপ্।(ব্যঙ্গ করে) একটাও মিথ্যে কথা বলবো না।উঁ! এলেন সত্যবাদী সব! বলতো এবার কাল তোরা গাঁজার সঙ্গে কি মিশিয়েছিস।কি মিশিয়েছিস। সারারাত ভীষণ পেটের যন্ত্রণা। মানুষটা নিশ্বাস ফেলতে পারছে না।

ভৃঙ্গী: (চেঁচিয়ে উঠে বললো) আপনার সিংহের দিব্যি মা, কিচ্ছু মেশাই নি।সত্যি বলছি। তিব্বতের ওদিক থেকে একেবারে টাটকা তুলে এনেছি। পৃথিবীতে আজকাল ওটার চাষই খুব বেশী হচ্ছে কিনা।

দুর্গা: (রাগত স্বরে)আমি কি জিজ্ঞেস করেছি কি চাষ হচ্ছে ,না হচ্ছে। একেবারে ফালতু বকবি না।(যেন মনটা একটু নরম হোলো)কি জানি কি ব্যাপার,তবে। তোরা বাপু একটা ব্যবস্থা কর। দেবাদিদেবের কষ্ট আরতো  চোখে দেখা যায় না রে।

(নন্দী আর ভৃঙ্গী ফিসফিস করে কি পরামর্শ করল,) নন্দী: তাহলে মাঠাকরুন আজ্ঞা করুন অশ্বিনীকুমারদের একজনকে ডেকে আনি।

দুর্গা: আচ্ছা! যা হয় একটা তাড়াতাড়ি কর।

শিব: ওঃ কি যন্ত্রণা গো।এবার মনে হচ্ছে মরেই যাবো।অ, দুর্গা কিছু একটা কর না। 

দুর্গা : কি করি বলতো।আচ্ছা নাও,এই আর এক চাঙড় বরফ লাগিয়ে দিই দাও।

(দুর্গা আর এক চাঙড় বরফ শিবের পেটে চড়াতে চড়াতে বললেন।)

 (নন্দী-ভৃঙ্গী পলকে অদৃশ্য হলো।)

( অশ্বিনীকুমারদের মধ্যে একজন এসে দাঁড়াল। ছোট অশ্বিনীকুমার।)

দুর্গা: কি হোলো,ছোট অশ্বিনীকুমার কেন,বড় কোথায়?

ছোট: বড় বাতে ভুগছে। নড়বার উপায় নেই।তাই আমাকে পাঠালেন।

দুর্গা: এস, এস, অত দূরে দাঁড়িয়ে কেন?

ছোট :(স্বগত)কাছে গিয়ে মরি আর কি! কি কথা,মা ঠাকরুনের -অত দূরে দাঁড়িয়ে কেন? আমার যেন এই বয়সে মরার সাধ হয়েছে! কে জানে বাবা!কিছু বলা যায় না। এই বুড়ো শিব এখন কিরকম মেজাজে আছেন! কথায় কথায় তো তৃতীয় নয়ন দিয়ে আগুন ছোটে। ভস্ম করে দিলেই হলো।

দুর্গা : কি অত বিড় বিড় করছো,কাছে এসে দেখবে তো নাকি!(গলায় ঝাঁঝ)

ছোট: এই -এই আসছি মা-ঠাকরুন।মা ঠাকরুন বলছি কি (আমতা আমতা করে বললো) কর্তার চোখে আগুনটাগুন নেই তো?

দুর্গা : আর আগুন! কাল রাত থেকে যন্ত্রণায় চোখই খুলতে পাচ্ছেন না। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। 

ছোট:(সাহস পেয়ে অশ্বিনীকুমার আস্তে আস্তে এগিয়ে এল) তাহলে ঠিক আছে ,ঠিক আছে।এই তো,এই তো,দেখি দেখি।এখানে ব্যথা,এখানে ,এখানে (পেটটা টিপে টিপে দেখল ,শিবও ব্যথা ব্যথা বলে সাড়া দিলেন।তারপর গম্ভীর গলায় বলল), এ আর দেখতে হবে না।

দুর্গা:কি হয়েছে? (দুর্গা ভীত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন) কি দেখলে বলো না!

ছোট:পিলে…

শিব: পিলে? অর্বাচীন কোথাকার।( শিব হুংকার ছাড়লেন।)

ছোট: আমি যাই হ্যাঁ… (বলেই ছুট)

দুর্গা :আরে ছুটছো কেন?আরে পালাচ্ছে কেন?ও নন্দী কি হোলো রে!ওষুধের বাক্সটা যে পড়ে থাকলো।এমন ছুটলে তো মর্ত্যের অলিম্পিক জিতে যাবে।যাঃ এবার কি হবে!

ছোট: (হাঁফাতে হাঁফাতে) এবারের মতো প্রাণ নিয়ে ফিরলাম বাবা! এখনি ,আর একটু হলেই আমার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেত আর কি!

ভৃঙ্গী : মা ঠাকরুন ,এবার কি হবে??

দুর্গা: (রেগে গিয়ে)কি হলো, ওরকমভাবে তাড়ালে কেন?কথাটা তো শুনতেই দিলে না।

শিব: না!তাড়াব না। (শিব দাঁতে দাঁত চেপে বললেন) ডাক্তারি করতে এসেছেন। ও সব মান্ধাতার আমলের ডাক্তার দিয়ে চলবে না আমার। আজকাল বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে।

দুর্গা: (অবাক হয়ে বললেন) কি করতে চাও তুমি?

শিব : (চেঁচিয়ে ডাকলেন)নন্দী, ভৃঙ্গী।

নন্দী-ভৃঙ্গী: আদেশ করুন বাবা। (নন্দী-ভৃঙ্গী ছুটে এসে দু’পাশে দাঁড়ালো)

শিব: এসব হাতুড়ে কবিরাজদের কর্ম নয়। তোরা কলকাতা চলে যা বড় বড় ডাক্তার আছে সেখানে। সেখান থেকে ভাল একজন ডাক্তার ধরে নিয়ে আয়।

(নদী আর ভৃঙ্গী মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।)

ভৃঙ্গী : (নীচু হয়ে আস্তে আস্তে) ভৃঙ্গী বলল, ঠাকুর,অপরাধ নেবেন না। কলকাতা শহরের অলিগলিতে ডাক্তার। সবাইয়েরই ঝকঝকে তকতকে সাইনবোর্ড। ওর মধ্যে কে উৎকৃষ্ট কি করে চিনবো বলুন। শেষকালে কাকে আসতে কাকে আনব, আপনি রেগে টং হয়ে যাবেন।

শিব : হুঁ, চিন্তার কথা বটে।কি করা যায়!(কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন, তারপর বললেন)আচ্ছা,ঠিক আছে। আয় তোদের দুজনের চোখে একবার হাত বুলিয়ে দিই, তাহলেই তোদের দিব্যদৃষ্টি খুলে যাবে।

নন্দী- দিব্যদৃষ্টি!! (ভয় পেয়ে)সে আবার কেমন দৃষ্টি ,বাপের জন্মে শুনিনি তো।

শিব: হ্যাঁ ,দিব্যদৃষ্টি। তাহলেই কে কেমন ডাক্তার তোরা ঠিক চিনতে পারবি। 

ভৃঙ্গী:  কি করে ঠাকুর।আমরা দুজন কি বেশি দেখতে পাবো।বড় বড় করে।

শিব: ধূর ধূর কি যে বলিস।তোদের আর দেবতা করতে পারলাম না।যত্তসব!

শোন তবে।ভালো করে শোন। (শিব থেমে থেমে আস্তে আস্তে বলতে লাগলেন), যে সব রোগী ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্য মারা যায়, তাদের আত্মারা রোজ সেই ডাক্তারের বাড়ি কিংবা ডাক্তারখানার সামনে ভিড় করে। কাজেই যে ডাক্তারের কাছে দেখবি এই সব আত্মার ভিড় কম, তাকেই তুলে নিয়ে আসবি।বুঝলি।

 দুর্গা: (এসে বাধা দিয়ে বললেন )ডাক্তারের খোঁজে যদি মর্ত্যেই পাঠাচ্ছো তাহলে কলকাতা কেন? কার্তিক বলছিল, ইওরোপ, আমেরিকায় চিকিৎসার নাকি আরও উন্নতি হয়েছে। তারা খুলি পর্যন্ত খুলে ভিতরের মালমসলা বদলে দিচ্ছে।

 শিব: (হেসে ফেললেন এত কষ্টেও)আমার খুলি খোলবার প্রয়োজন হবে না গিন্নী, মগজে মালমসলা মেরামত করবার দরকার নেই। সে রকম কিছু হলে তো তোমার ভাই শনিকেই ডাকতাম। ওর চেয়ে বড় সার্জন আর কে আছে। গণেশের মুণ্ডুটাই বেমালুম বদলে দিল। যাক্‌, কলকাতার ডাক্তারই আমার দরকার। পুরো পার্বণে এখনও ওরাই আমাদের ডাকে। নৈবেদ্য দেয়। আমাদের ধাত এদের জানা, কাজেই আমার চিকিৎসা ওরাই ঠিক করতে পারবে।

দুর্গা: আচ্ছা ,যা পারো করো।আমি বাবা রান্নাঘরে যাই। দুধ চাপিয়ে এসেছিলাম কড়ায়।পুড়ে গেল নাকি কে জানে।(রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলেন)

 নন্দী- ভৃঙ্গী: তাহলে ঠাকুর আমরা আসি.. (কলকাতার দিকে ছুটলো তারা)

নন্দী: মা ঠাকরুনে সাথে বছর বছর তো আসতেই হয়,তাই ক’জন ডাক্তারকে আমি চিনি ,বুঝলি ভৃঙ্গী।

ভৃঙ্গী: গতবারে গণেশের যখন পেট খারাপ হোলো,আমিই তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম।ডাক্তারটি বড়ই অমায়িক ছিল রে।আরে ,আরে এই তো রে ডাক্তারের বাড়ি!এই নন্দী নাম্ নাম্, আর কত উড়বো,চল একেই নিয়ে যাই।

নন্দী: হ্যাঁ রে চল্ সাইন বোর্ড তো চকচক করছে। নামকরা ডাক্তার মাইরি।কি করেছিস রে ভৃঙ্গী তোর চেনা ডাক্তার এত নামকরা।

ভৃঙ্গী: (যেন কলার তুলে বলে) তবে আর বলছি কি? আমি দেবাদিদেব শিবের চেলা।আমি কি কম যাই নাকি।

নন্দী-ভৃঙ্গী: একি!(দুজনে একসঙ্গে)

নন্দী: আর কলার তুলতে হবে না রে ভৃঙ্গী। দেখ দেখ চেম্বারের সামনে এতো দুমাইল লম্বা লাইন রে।

ভৃঙ্গী:সব রোগীদের ভিড়। তার মানে, এত বড় ডাক্তারও ভুল চিকিৎসায় এতগুলো রোগীকে খতম করেছে। 

নন্দী: আর দাঁড়িয়ে কি হবে, চল অন্যকোথাও।আরে, এখানেও তো একই অবস্থা।

ভৃঙ্গী: ভাই নন্দী,এখানের হালটা একবার তাকিয়ে দেখ।

নন্দী: আর তো পারছি না ভৃঙ্গী।গলা শুকিয়ে কাঠ। বাবার প্রসাদও আানতে ভুলে গেছি।যাইহোক,একটু ধোঁয়া দিলে হয়তো বুদ্ধি খুলতো।

ভৃঙ্গী: এখন বেলা দুটো বাজে।আর চলতে পারছি না আমিও। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। ক্ষুধায় পেট চিনচিন করছে। এর মধ্যে কম করে অন্ততঃ চল্লিশজন নামী ডাক্তারের কাছে গিয়েছি, কিন্তু অল্পবিস্তর একই অবস্থা। কোথাও ভিড় হয়তো একটু বেশী, কোথাও একটু কম।এখন উপায়?

নন্দী: উপায় পরে হবে। কিছু পেটে না পড়লে আমরাও আত্মা হয়ে যাব।

ভৃঙ্গী: কথাটা সত্যি রে।দেখি তোর ট্যাঁকে কত পয়সা আছে বের কর।এই নে আমার কাছে যা আছে।

নন্দী: এই, পঁচিশ, পঞ্চাশ, এক,দেড়… ভৃঙ্গী দেড় টাকা হয়েছে রে। ব্যস্ এতেই এখন হবে। এক টাকার ফুচকা আর আট আনার দু’গ্লাস করে কোকাকোলা খেয়ে নিই চল। কি বলিস তুই!

ভৃঙ্গী: একেবারে মনের কথা বলেছিস ভাই।দ্রব্যদুটির ওপর আমার লোভ অনেক দিনের।কিন্তু সেবার সরস্বতীকে পটিয়ে পাটিয়ে যেই দোকানে গেছি…মাঠাকরুন হাজির তাঁর আগুন চোখ নিয়ে।আমরা দুজন তো,সেদিন লেজ উঠিয়ে চোঁ চাঁ।পরে কার্তিক বললো কুচুটে লক্ষ্মীটা মায়ের কান ভাঙিয়েছিল।

নন্দী: থাম্ থাম্, তোর গল্প শুরু হলে তো আর শেষই হতে চায় না।

ভৃঙ্গী: এ গল্প নয় রে,নন্দী…

নন্দী: তুই থামতো।এখন তো আর মা ঠাকরুন নেই।একটু শান্ত হয়ে খা দেখি।কই গো আমাদের দুজনকে দুটো শালপাতা দাও দেখি।

ভৃঙ্গী : আহা, আহা কি খেলাম।যেমন ফুচকা তেমন কোকাকোলার স্বাদ।মনে হয় আরও খাই। আশ যেন মেটে না।(ঢেকুর তুলতে লাগলো)

নন্দী: এবার থাম্ বাপু।চল্, দু’জনে মনুমেন্টের তলায় বসি।কি করা যায় ভাবতে হবে তাড়াতাড়ি।তুইও একটু ভাব।ডাক্তার একটা ধরে না নিয়ে গেলে তো রক্ষা নেই।কি হবে বুঝতে পাচ্ছিস না, শুধু খাই আর খাই। 

ভৃঙ্গী:কিন্তু জেনেশুনে এসব ডাক্তার নিয়েই বা যাই কি করে। আমার কিছুই তো মাথায় আসছে না ভাই।

নন্দী: আমার মাথায় একটা  মতলব এসেছে জানিস।চল্, এক কাজ করি। শহরের ডাক্তার তো সব এই এক গোত্রের। সব মানুষ মারা ডাক্তার।তার চেয়ে চল্ শহরতলিতে খোঁজা যাক। কলকাতার কাছাকাছি ভাল ডাক্তার নিশ্চয় আছে।

ভৃঙ্গী:(ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বলল)চল্, চল্ তাই যাওয়া যাক্।

নন্দী: ওরে ভৃঙ্গী,কোথায় গেলাম না বলতো! উত্তরপাড়া, বালি, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, চন্দননগর কোথাও তো সুবিধা হলো না। দু’জনে আরো একটু এগোই চল্।

ভৃঙ্গী: হুররে.. 

নন্দী: কি হোলো তোর আবার…

ভৃঙ্গী:এই দেখ, সরু গলির মুখে ছোট এক ডাক্তারখানা। মাত্র দুটি আত্মা দাঁড়িয়ে। 

নন্দী: এটা কোন জায়গা বলতো?

ভৃঙ্গী : সাইন বোর্ডে দেখ,হুগলী লেখা আছে।

 (নন্দী আর ভৃঙ্গী আনন্দে লাফিয়ে উঠল)

নন্দী-ভৃঙ্গী:  তাহলে “মিল গিয়া” (রাষ্ট্রভাষায় দু’জনেই আনন্দ প্রকাশ করল)

নন্দী: চল্ ভৃঙ্গী আর একেবারেই দেরি নয়।এটাকেই ওঠাই।ঢোক ঢোক্,কুইক্…

 ডাক্তার: (স্বগত)আরে! এরা আবার কারা।এপাড়ায় তো দেখিনি কোনোদিন। যা বেয়াড়া চেহারা দুজনের।কোথা থেকে এলো,মারবে টারবে না তো।না,বইটা পরে পড়বো ক্ষণ।পেশেন্ট বলে কথা।হুঁ হুঁ বাবা। একটু গম্ভীর ভাবে বলতে হবে দেখছি,ভ্রু টাও কোঁচকাতে হবে একটু। হুম্ আয়নাটায় মুডটা ঠিকঠাক হোলো কিনা দেখে নেই। দাঁড়াও ব্যটাচ্ছেলে তারপর দেখছি তোদের । (তাদেরকে ঢুকতে দেখে ডাক্তার গম্ভীর গলায় বললো) কি? ম্যালেরিয়া না সান্নিপাতিক?

নন্দী- ভৃঙ্গী: ওরে পাঁজাকোলা করে তুল। তুলে নে একেবারে।আর এক মিনিটও দেরি নয়।ধর ধর…

ডাক্তার:(স্বগত) আরে আরে ভূমিকম্প নাকি? না না,আজ মনে হয় হুগলীতেই  অ্যাটম বোম পড়েছে। হ্যাঁ, ঠিক মারাই গেছি তবে।না! বেঁচেই তো আছি তাহলে কি এই দুটো লোক অন্য গ্রহের। এলো আর, তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলেছে।তবে তিনজনেই  তো দেখছি আকাশে উড়ছি।দেখা যাক্ কি হতে যাচ্ছে।  বেশ লাগছে কিন্তু।

নন্দী-ভৃঙ্গী: ব্যাস্, এসে গেছি কৈলাসে।

ডাক্তার : কৈলাস!! সেটা আবার কোথায়?আরে কোথায় এলাম আমি?।কোনো নতুন গ্রহ নাকি? উত্তর দেন না কেন?

দুর্গা : আসুন আসুন ডাক্তারবাবু।আমার ওনার বড্ড পেটের ব্যথা কাল রাত থেকে…

ডাক্তার:(স্বগত) এতক্ষণে বুঝলাম।ওরে শালা।এই বুড়োর জন্য তবে আমাকে ধরে আনা,দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।শালা,এই জন্য তোমরা আমার এমন হাল করলে। হুঁ হুঁ দাড়া তবে….একটু গম্ভীর হয়ে নিই।আচ্ছা, এই বুড়োটা কি মহিলার স্বামী,না দাদু! মহিলাটিকে তো বেশ ভালোই দেখতে! কেমন পাকা গমের মতো গায়ের রঙ।আহা, মুখটাও কেমন চাঁদপানা।দূর দূর,কি ভাবছি। যাইহোক আর যেই হোক আমি ডাক্তার,ফিজ্ টা তো উসুল করতেই হবে।

দুর্গা: ডক্তার বাবু ওনার অবস্থা বেশ মারাত্মক। যন্ত্রনা কেবলই  বাড়ছে। দুবার বমিও হয়েছে।

শিব:  নন্দী শোন্…(একবার চোখ খুলে তাকিয়েই বললেন)

নন্দী:  এই আসি…(ফিসফিস করে বলল)আজ্ঞে,বাবা ঠাকুর…

শিব: (কেউ যেন শুনতে না পায় এমন করে বললেন) এ কাকে নিয়ে এলি, এ যে একেবারে ছোকরা।কত বয়স হবে ২৬/২৭ নাকিরে! আর পেলিনা।

নন্দী: (ফিস ফিস করে বললো)কি বলি বাবা ঠাকুর। যত বড় ডাক্তার,যত বয়স বেশি, তত রোগীর আত্মার ভিড় বেশি। আমরা দু’জনে সারা কলকাতা চষে ফেলেছি। কোন ডাক্তারকে বাদ দিই নি…(হঠাৎ ডাক্তারের ধমকে নন্দী থেমে গেল।)

ডাক্তার-ও কি করছেন?অ্যাঁ, কি করছেন জানতে পারি কি?(ডাক্তার দুর্গাকে ধমকাচ্ছে)আপনি এমন চাঁই চাঁই বরফ পেটের ওপর চড়াচ্ছেন কেন?

দুর্গা:(হঠাৎ ধমকানোতে আমতা আমতা করেন)না, আসলে,না,  ওঁর পেটে একটা যন্ত্রণা হচ্ছে কাল রাত থেকে, তাই বরফ দিচ্ছি যদি ব্যথাটা একটু কমে।

ডাক্তার: কিসের জন্য ব্যথা সেটাই জানলেন না, কেবল বরফ মালিশ করে যাচ্ছেন?এখানে তো দেখছি, চারদিকে বরফ, কিনতে তো আর হয় না, তাই বিনাপয়সায় চিকিৎসা করছেন বুঝি! 

দুর্গা :(বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করলেন। স্বগত বললেন) কুল ডাউন দুর্গা।কুল্ ডাউন।এ তোর অসুর নয়,যে খুঁচিয়ে মেরে ফেলবি।হাজার হোক ডাক্তার। চটাচটি করা উচিত হবে না। এর কেরামতিটাই এখন দেখ বরং।(মুখে বললো)এই যে ডাক্তার বাবু বরফ সরিয়ে দিচ্ছি। এই, এই.. এই নিন সরিয়ে দিলাম।

ডাক্তার:( তারপর শিবের দিকে চেয়ে বলল)নাম কি আপনার? 

শিব: শিব।

ডাক্তার: শিব কি?অ্যাঁ, শিব কি? (ডাক্তার খিঁচিয়ে উঠল)শিবচন্দ্র না শিবকুমার। তাছাড়া পদবী একটা থাকবে তো নাকি? ঘোষাল, নাগ, খান, মান্না যাহোক কিছু।

শিব:(খুব মৃদুকণ্ঠে বললেন)শিবচন্দ্র দেবাদিদেব চন্দ্রমৌলি মহেশ্বর। 

ডাক্তার: কি কি(খিক্ খিক্ করে নিজে একটু হেসে নিল)বাবাঃ,এ যে একেবারে মালগাড়ি।যা হোক সরে আসুন, পেটটা দেখি।

শিব: বড্ড, ব্যথা যে আপনি একটু কাছে এসে দেখুন না।

ডাক্তার: আচ্ছা, আচ্ছা। এখানে টিপলে ব্যথা লাগছে।এখানে, এখানে..

শিব: (হঠাৎ) ব্যথা, ব্যথা…

ডাক্তার : চুপ,একদম চুপ। অমন আঁতকে উঠার দরকার নেই।কই হে জোয়ানের দল,আমার ব্যাগ থেকে নলটা দাও দেখি,ওই যে,উপরে আছে।হ্যাঁ, হ্যাঁ ওটাই।দাও দাও, তাড়াতাড়ি। তোমায় আর দেখতে হবে না,ওটা কানে লাগিয়ে দেখতে হয়।ওটাকে স্টেথোস্কোপ বলে,বুঝলে।

ভৃঙ্গী: কি কি,কি বলে! টেস্কো,না না থেটোপক্স…(উচ্চারণ হোলোনা)

ডাক্তার: থাক থাক,অত কষ্ট করতে হবে না,দাঁত খুলে যাবে,আর দাঁতের চিকিৎসা আমি জানি না।এবার দাও দেখি বাপু!

শিব: আরে,দে না তাড়াতাড়ি… 

ডাক্তার(অনেক্ষণ কানে লাগিয়ে শোনার পর)হুম্, মহেশ্বর মশাই, পেটের মধ্যে তো সপ্তসমুদ্রের গর্জন শুনতে পাচ্ছি। কাল আহার করেছিলেন কী?

শিব: আমার আর আহার, (শিব ম্লান হাসলেন)সামান্য একটু গঞ্জিকা ধুতুরা সহযোগে।এই এতটুকু! (শিব হাত দিয়ে গঞ্জিকার মাত্রাটা দেখালেন)

ডাক্তার: অ্যাঁ!অতটা গাঁজা।সর্বনাশ। গাঁজা আপনাকে ছাড়তে হবে মশাই। 

নন্দী: (ভয়ে ভয়ে)এই রে,বাবা ঠাকুরের মেন জায়গায় ঘা দিয়েছে ডাক্তার, এবার ডাক্তারও বুঝি গেল।এই তো ঠাকুরের  তৃতীয় নয়ন একটু জ্বলে উঠলো যেন।খেয়েছে! ডাক্তারি করতে এসেছিস কর,বাবাকে গাঁজা পরিত্যাগ করতে আদেশ করে, এ কোন মহামূর্খ!(স্বগত)না! বাবা বোধ হয়,শান্ত হলেন।

শিব:তোমার হাতে মাত্র দুটি রোগী এ পর্যন্ত মারা গেছে শুনে তোমাকে চিকিৎসার জন্য আনতে আদেশ দিয়েছিলাম। আমার রোগ তুমি ধরতে পারলে না। কতদিন তুমি ডাক্তারি আারম্ভ করেছ? 

ডাক্তার: আজ বেলা নটা থেকে।

নন্দী-ভৃঙ্গী: সেকি! (দুজনে যেন চিৎকার করে উঠলো)

 শিব: (চমকে উঠে তিনিও বললেন) বলো কি! বেলা নটা থেকে শুরু। একদিনেই দুটো রোগী শেষ।

ডাক্তার: (অম্লানবদনে ঘাড় নাড়ল)হ্যাঁ। একটা রোগী বেলা বারোটায় গেল ভুল ইনজেকশনে। একটা গেল বেলা তিনটেয়। ডোজটা এই একটু বেশী হয়ে গিয়েছিল।

শিব: অ্যাঁ। (বিহ্বল শিব চিৎকার করে উঠলেন) “এই একটু”… (উঠে বসতে গেলেন)

ডাক্তার : আরে আরে, ধড়মড় করে উঠে বসছেন কেন? শুয়ে থাকুন, শুয়ে থাকুন বলছি!

শিব: আমাকে পালাতে হবে, ওরে কে আছিস রে ধর আমাকে…(আর সঙ্গে সঙ্গে ঠং করে একটা শব্দ। তাঁর মুখ থেকে কি একটা বেরিয়ে পাথরের ওপর গড়িয়ে পড়ল)

দুর্গা:কি আওয়াজ হোলো ঠং করে?তোমার মুখ থেকে কি বেরোলো?দেখি দেখি…(তাড়াতাড়ি জিনিসটা তুলে নিয়ে বললেন)একি কাণ্ড। আমার সিঁদুর কৌটো তোমার পেট থেকে বের হলো?

শিব :(মাথা চুলকাতে চুলকাতে লজ্জাজড়িত কণ্ঠে বললেন) তোমার সিঁদুর কৌটো! আমি অন্ধকারে কাল রাতে বোধহয়,ঠিক বুঝতে পারি নি। ধুতরো ভেবে গিলে ফেলেছিলম। তাই পেটের অত যন্ত্রণা হচ্ছিল।এখন তো আর যন্ত্রণা নেই। 

দুর্গা: বলো কি গো,অ্যাঁ। ধুতরো ভেবে আস্ত সিঁদুর কৌটো গিলে ফেললে…এখন আবার উঠে দাঁড়িয়ে পড়ছো।

শিব:(দাঁড়িয়ে উঠলেন ডাক্তারের মাথার ওপর ডানহাতটা প্রসারিত করে বললেন)ডাক্তার, আমি তোমায় আশীর্বাদ করছি, তুমি মানুষ হও। যশের অধিকারী হও। তোমার জন্যই আমার যন্ত্রণার উপশম হলো।

ডাক্তার:  (খিঁচিয়ে উঠলো) ওসব ফাঁকা আশীর্বাদ রাখুন চন্দ্রমৌলিমশাই। আপনাদের শুভেচ্ছায় আর কিছু হয় না। আমার দর্শনী বত্রিশ টাকা হয়েছে,মিটিয়ে দিন। আমার রেট শহরে ষোল, আর মফস্বলে বত্রিশ।তারপর যাবার ব্যবস্থাও করে দিতে হবে। আপনার এই অনুচরদের বলে রাখুন।

 শিব-দুর্গা: (দুজনেই অবাক,একসঙ্গে বললেন)অ্যাঁ! দর্শনী,টাকা বলো কি?

ডাক্তার : আমি ওসব কিছুই বুঝি না,ভালো হয়েছেন টাকা দিন।অবশ্য, ভালো না হলেও টাকা তো দিতেই হোতো।

দুর্গা : “ভালো না হলেও টাকা দিতে হোতো” (দুর্গা যেন ডাক্তারের কথাগুলোই রিপিট করে,নিজের অজান্তেই) 

শিব: কই গো গিন্নী, টাকাটা দাও…

দুর্গা : এই দিই…(স্বগত) কি আর করি,গতবছর স্বেচ্ছাসেবকদের নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখা প্রণামীর টাকা একটা ভাঙা হাঁড়ির তলায় রেখেছিলাম, তাই বের করে আনি।(মুখে বললেন)এই নাও বাছা, সবসুদ্ধ ত্রিশ টাকা। দু’টাকা কম হলো।কেমন।আর তো আমার কাছে,কিছুই নেই। 

ডাক্তার: কিছুই নেই মানে,আর দুটাকা দিতেই হবে।আমার রেট একেবারে ফিক্সড। আগে জানলে আমি,হাতই লাগাতাম না।

দুর্গা: (মনে মনে রাগ হলেও,শিব যেহেতু ভালো হয়ে গেছেন,তাই হেসে বললেন)তুমি আমার এই সিঁদুর কৌটোটা নিয়ে যাও বাছা! এটা খাঁটি সোনার। দাম দু’টাকার অনেক বেশী।

ডাক্তার:(হাত নাড়ল) না হবে না।এতে হবে না।খেপেছেন। আমাদের দেশে সোনার জিনিসের আর দাম নেই।

দুর্গা :(অবাক হয়ে বললেন) মানে সোনার বাংলা আর নেই।

ডাক্তার: ওসব শক্ত অর্থনীতির কথা আপনি বুঝবেন না। তার চেয়ে আমাকে ওই বাঘছালটা দিন। যেটা পেতে চন্দ্রমৌলিমশাই শুয়েছিলেন। ঠাকুমা অনেক দিন ধরে একটা বাঘছালের জন্য খেয়ে ফেলছেন আমাকে।

শিব:এই, এই নাও বাছা, তুমি এই বাঘছালটাই নিয়ে যাও।

ডাক্তার: (একগাল হেসে বললো)ধন্যবাদ। চলি, চন্দ্রমৌলিমশাই। দরকার পড়লে ডাক দেবেন। আসি মিসেস চন্দ্রমৌলি। টা টা।

নন্দী: ভৃঙ্গী,ধর রে ধর,আর দেরি করিস না ভাই।এবার মনে হয়,বাবা ঠাকুরের পরনের বাঘছালটাও খুলে নেবে।

ডাক্তার: অ্যাই, অ্যাই কি করছো! আস্তে আস্তে।এমন হেঁচকা টান দেয় কেউ…আচ্ছা ভাই তোমরা কি ভাবে আকাশে ওড়ো বলোতো…

নন্দী-ভৃঙ্গী: ওই শালা ডাক্তার, এতক্ষণ বাবাঠাকুরের জন্য কিছুই বলিনি।একদম চুপ্।স্পিকটি নট!

©কপিরাইট:মানিক করণ।

Disclaimer :

এই রূপান্তরিত নাটিকাটি যেকোনো অবাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যেতেই পারে।কিন্তু লেখকের অনুমতি ব্যতীত নাটিকাটি কোনোরূপ বাণিজ্যিক ভাবে (অডিও,ভিসুয়াল,প্রিন্ট)ব্যবহৃত হলে,কপিরাইট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।নাটিকাটি বর্তমানে manikkaran10.co.in -এর স্বত্বাধীন। কেউ বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে Contact us পেজ-এ গিয়ে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

Related Post

One thought on “হাসির শ্রুতি নাটক”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *