একনজরে:

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেকোনো উৎসবে,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবেই,হবে।আমরা কিভাবে একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করবো,তার ধারাবাহিক বিবরণ

‌‌‌‌‌আজি এ মহাসপ্তমীর সন্ধ্যায়, অজস্ৰ শঙ্খনিনাদে .
আমার নয়নপাতে অমলমুরতি ধরি ..
এলে মাগো দশভূজা কোন্ অপরূপ সাজে …
আকুল মনপবনে ..তব পদধ্বনি বাজে ;
এলে সুনয়না মধুর বেশে ভরালে এ মন অধীর আবেশে !
শিশিরকণায় শেফালীকা ফুলে,তোমার সে রূপে সবই গেছি ভুলে !
পরমা প্রকৃতি শক্তিস্বরূপা,ভবানী মা তুমি জগদম্বিকা !
মৃণ্ময়ী নও চিন্ময়ী মাগো প্রকৃতির মাঝে তুমি সদা জাগো !
হৃদয় আলয়ে তোমার শোভা তোমার মূর্তি বড় মনোলোভা !
মনের অসুর দমন করে ,তোমায় প্রণমি ও মা করজোড়ে !
দেবীপক্ষের এ মহাতিথিতে এসো এসো মাগো এই ধরণীতে …
তোমার ধেয়ানে তোমার স্তুতিতে মাগো চাই তোমার আশীষ লভিতে।।

আজ এই মহা সন্ধ্যায়,পরিবারের প্রথমদিনের যজ্ঞাগ্নির ছোঁয়ায় পরিবারের পবিত্রতা, শুদ্ধতা হোক অবিনশ্বর। আর আগুনের পরশমনির ছোঁয়ায় সকল প্রাণ হয়ে উঠুক প্রাণময়.….

(১)গান- আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে

আজ মহা সপ্তমী। সাহু পরিবারের সকল সদস্য,যার অপেক্ষায় থাকে সারাবছর আজ সেই শুভ ক্ষণ আবার সমাগত।দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা।অসুররদলনী— এসেছেন আমাদের পরিবারে।আজ শিশিরস্নাত ভোরে পরিবারের সবাই মিলে আবাহন করেছি তাঁর। আর এই সুন্দর দিনের সায়াহ্নে এই আনন্দকে ভাগ করে নিতে আমরা সমবেত হয়েছি পারিবারিক অনুষ্ঠানে।মায়ের চরণে,পরিবারের সাংস্কৃতিক নিবেদন।

(২)গান- আলোকের এই ঝরনাধারায় ধুইয়ে দাও

দেবী দুর্গাকে প্রথম আরাধনা করেন মহর্ষি কাত্যায়ন – কন্যারূপে। তাই দেবী দুর্গা মহাষষ্ঠীতে ‘কাত্যায়নী’ রূপে পূজিতা হয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ-সহ সমস্ত গোপ ও গোপী দেবী কাত্যায়নীর পূজা করেন, এর উল্লেখ মহাভারতে পাওয়া যায়। আজ মহাসপ্তমীতে দেবী দুর্গা ‘কালরাত্রি’ রূপে পূজিতা হয়েছেন।জগতের এই মহা আনন্দযজ্ঞে আমরাও সামিল।যেন বলতে ইচ্ছে করে…

জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ। 

ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন ।

 নয়ন আমার রূপের পুরে 

সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে, 

শ্রবণ আমার গভীর সুরে

হয়েছে মগন।

তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার

 বাজাই আমি বাঁশি। 

গানে গানে গেঁথে বেড়াই 

প্রাণের কান্না হাসি।

এখন সময় হয়েছে কি? 

সভায় গিয়ে তোমায় দেখি 

জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব

এ মোর নিবেদন।

(৩)গান- আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, বিরাজ সত্য সুন্দরম্

পরিবারের সবাই কে বলবো মায়ের দিকে একবার তাকান,দেখুন

মায়ের দু হাতে হাতে ত্রিশূল: ত্রিশূলের তিনটি ফলা আসলে ‘ত্রিগুণ’-এর প্রতীক। প্রত্যেক জীবের মধ্যেই বর্তমান থাকে সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ— এই ত্রিগুণ। সত্ত্ব হল ধর্ম জ্ঞান, রজঃ মানে অহঙ্কার এবং তমঃ মানে অন্ধকার।

এক হাতে সুদর্শন চক্র: চক্র নির্দেশ করে, বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হয় এক শক্তির  দ্বারা এবং ব্রহ্মাণ্ড আবর্তিত হয় সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে।যেমন করে অনবরত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরে চলেছে পৃথিবী। এও তো প্রকৃতি। 

এক হাতে পদ্ম: পদ্ম হল ব্রহ্মের প্রতীক বা জ্ঞানের প্রতীক। অর্ধস্ফুট পদ্ম মানব চেতনে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জাগরণকে নির্দেশ করে।

এক হাতে তির এবং ধনুক: তির ও ধনুক হল প্রাণশক্তির প্রতীক। ধনুক যেখানে সম্ভাব্য ক্ষমতাকে নির্দেশ করে, এবং তির নির্দেশ করে গতিময়তা। একইসঙ্গে তির ও ধনুক দ্বারা বোঝানো হয় যে মা দুর্গা এক শক্তি যে শক্তি বা প্রকৃতি  ব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তির উৎস।

আরেক হাতে অসি:এই অস্ত্র জ্ঞান এবং ধীশক্তির প্রতীক। অসি দ্বারা বোঝানো হয়, জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা এবং বুদ্ধির  দীপ্তিকে।

আরেক হাতে বজ্র:বজ্র হল আত্মশক্তির প্রতীক। সামান্য মেঘের ঘর্ষণ থেকে যেভাবে  বজ্রশক্তি উৎপন্ন হয় তেমনই আত্মশক্তি তৈরি হয় কর্ম থেকেই।

আরেক হাতে বর্শা:  এই অস্ত্র বা হাত  পবিত্রতা এবং ভুল ও ঠিকের প্রতীক। 

অন্য এক হাতে সর্প:  সর্প হল  চেতনা ও শক্তির প্রতীক। দেবীর হাতে সাপ বোঝায়— চেতনার নিম্ন স্তর থেকেও সাধনার মাধ্যমে এক  উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছনো যায়।

আরেক হাতে কুঠার: অশুভের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক কুঠার। একই সঙ্গে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভীত না হওয়ার প্রতীকও হল কুঠার।

এবং আরেক হাতে শঙ্খ:শব্দ মরে না।শঙ্খ থেকে যে শব্দের উৎপত্তি হয় তার থেকেই জীবজগতের সৃষ্টি। এও অমোঘ প্রকৃতি। 

এতকিছু জানার পরে,মনে হয়না কি আমরা মানুষ কত ক্ষুদ্র, কত ছোটো।আমরা কেবল যা করতে পারি, তা হোলো আত্মনিবেদন। মনের সমম্ত কালিমা,মলিনতাকে সরিয়ে আমরা যেন নির্মল, পবিত্র হয়ে উঠতে পারি,মায়ের চরণে এইটুকুই হোক আমাদের প্রার্থনা…

(৪)গান-তুমি নির্মল করো,মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে

রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে,

পরাও যারে মণিরতন-হার- 

খেলাধূলা আনন্দ তার সকলি যায় ঘুরে, 

বসন-ভূষণ হয় যে বিষম ভার।

ছেঁড়ে পাছে আঘাত লাগি,

পাছে ধূলায় হয় সে দাগি,

আপনাকে তাই সরিয়ে রাখে সবার হতে দূরে,

চলতে গেলে ভাবনা ধরে তার— 

রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে,

পরাও যারে মণিরতন-হার।

কী হবে মা অমনতরো রাজার মতো সাজে, 

কী হবে ঐ মণিরতন-হারে।

দুয়ার খুলে দাও যদি তো ছুটি পথের মাঝে

রৌদ্রবায়ু-ধুলাকাদার পাড়ে।

যেথায় বিশ্বজনের মেলা

 সমস্ত দিন নানান্ খেলা,

চারি দিকে বিরাট গাথা বাজে হাজার সুরে,

সেথায় সে যে পায় না অধিকার, 

রাজার মতো বেশে তুমি সাজাও যে শিশুরে, 

পরাও যারে মণিরতন-হার।

(৫)গান-মঙ্গলদীপ জ্বেলে অন্ধকারে দুচোখ আলোয় ভরো প্রভু

ক্যানভাসের সামনে,

অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে,

তুমি আঁকলে, একটা বৃত্ত,

বললে,এটা পৃথিবী।

এবার একটা ফুটকি দিলে তার মাঝখানে

বললে, এটা মানুষ।

তার চারপাশে ছটা এঁকে দিলে, 

এইগুলো তার তেজ, প্রতিভা,শৌর্য,

ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবী জুড়ে ক্রমশঃ ।

আমি চুপ করে রইলাম,

বলতে পারলাম না,

বৃত্তটা আসলেই আমার হৃদয়ভূমি, 

আর তুমি মা,আমার সকল কালের আরাধ্যা

গ্রাস করে নিচ্ছো, আমার সমস্তকিছু,

(৬)গান- দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী 

আজকের দিনে আমাদের অনুষ্ঠান শেষের পথ ধরেছে।কাল আবার এক নতুন ভোর। আমাদের অন্তর জুড়ে স্নিগ্ধতার প্রলেপ ছড়িয়ে দেবে।রাত ফুরোলে মহাঅষ্টমী।সিদ্ধিদাত্রী মায়ের পথে বিছিয়ে থাকবে ঝরা শিউলি,ঘাসের ডগা থেকে শিশির বিন্দু খসে পড়বে টুপ-টাপ করে।অপরূপা প্রকৃতির মনলোভা সৌন্দর্যে আমাদের অবসাদগ্রস্ত মনে নতুন প্রেরণার সঞ্চার হবে।আজ রাতের এই জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। চেয়ে দেখুন বাইরে মেঘমুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসছে পৃথিবীতে।আর আমরা মায়ের সামনে বসে আছি….আমরা অপেক্ষা করছি জীবনের রাত্রি কেটে গিয়ে আসবেই এক নতুন ভোর…শারদ ভোর…

(৭)নাচ-শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী

সৰ্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে ।

শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়নি নমোহস্তু তে ৷৷ 

সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি ।

গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্তু তে ৷৷ 

শরণাগত দীনার্তপরিত্রাণপরায়ণে ।

সর্ব্বদ্যার্তিহরে দেবি নারায়নি নমোঽস্তু তে ৷৷ 

হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণীরূপধারিণি ।

কৌশান্তঃক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে ৷৷ 

ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে মহাবৃষভবাহিনি ।

মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোহস্তু তে ॥ 

ময়ুরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরে হনঘে ।

কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোহস্তু তে ৷ 

হে সর্ব্বমঙ্গলের মঙ্গলরূপিণি, হে কল্যাণদায়িনি, হে ধৰ্ম্মার্থকাম মোক্ষ- সাধিকে, হে সর্ব্বরক্ষাকারিণি, হে ত্রিনয়নে, হে গৌরি, হে নারায়ণ তোমাকে নমস্কার করি।

হে ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিব-শক্তি-স্বরূপে, অবিনম্বরে, গুণাধারে, গুণময়ে, নারায়ণি তোমাকে নমস্কার করি ॥ 

হে শরণাগত দীন ও আর্দ্র জনগণের পরিত্রাণকারিণি, সর্ব্বজীবেরপীড়া নাশিনি, দেবি নারায়ণি, তোমাকে নমস্কার করি ৷ 

হে হংসযুক্তরথারূঢ়ে, কমণ্ডলু-জল- প্রক্ষেপকারিণি (তদ্বারা শত্রু-বিনাশিনি ) ব্রহ্মাণীরূপধারিণি দেবি নারায়ণি তোমাকে নমস্কার করি৷৷ 

হে মাহেশ্বরী স্বরূপে, ত্রিশূল, অর্দ্ধচন্দ্র ও সর্পধারিণি মহাবৃষভারূঢ়ে নারায়ণি তোমাকে নমস্কার করি ॥ 

(৮)গান-জাগো দুর্গা জাগো দশপ্রহরণ ধারিনী

মাগো, তোমার আগমনে

প্রফুল্ল হৃদয়, পূরব দিশায় হয় অরুণ উদয়।

রাঙিল ভুবন আজি অরুণ আভায়, 

ফুলের সৌরভ ভাসে বাতাসের গায়।

ফুল বনে ফুল শাখে ফুটে ফুলকলি, 

মধু আহরণে আসে গুঞ্জরিয়া অলি।

ভোরের আলোয় মুক্ত নিশির শিশির

দূর্বাদল-বৃন্ত হতে ঝরে ঝির ঝির।

মাগো,  তোমার আগমনী সুর তোলে প্রানে এক হিল্লোল –

খুশিতে বিভোর বসুন্ধরা আবেগে বিহ্বল !

মাগো তোমার মধুর রূপে মজে যায় ত্রিভূবন !

মৃন্ময়ী তুমি কৃপা কর সবে এই বলি সারাক্ষণ !

অশুভ থেকে শুভ’র দিকে আঁধার থেকে আলোকে …

মৃত্যুর থেকে অমৃতের পথে ! নিয়ে চল মাগো তব জয়রথে।

(৯)গান-আলো আমার আলো ওগো,আলোয় ভুবন ভরা 

অ-সম্ভব” বলে কিছু হয় না। শুধু “অ” টাকে সরানোর জন্যই প্রতিদিন নিজের সাথে কিংবা অপরের সাথে লড়ছি আমরা। এই “অ” টাই তো অসুর। অসম্ভব থেকে “অ” কে সরিয়ে দিতে পারলেই সব সম্ভব। জগন্মাতা এসেছেন। চলুন আজ জগন্মাতার সামনে বসে প্রার্থনা করি এই অসুরের “অ” কে সরিয়ে আমাদের জীবন যেন নতুন সুরে বেজে ওঠে। যে যেখানে যেভাবে লড়ছে, সব লড়াই শেষে যেন হাসি মুখে জয়ী হতে পারে। সব অসম্ভব থেকে “অ” সরে গিয়ে জীবনে সবকিছুই  সব সম্ভব হয়ে উঠুক।আলোকময় হয়ে উঠুক সমগ্র মানবজীবন। 

আছ, অনল-অনিলে, চিরনভোনীলে, ভূধরসলিলে, গহনে;

আছ, বিটপীলতায়, জলদের গায়, শশীতারকায় তপনে।

আমি, নয়নে বসন বাঁধিয়া,

ব’সে, আঁধারে মরিগো কাঁদিয়া;

আমি, দেখি নাই কিছু, বুঝি নাই কিছু,

দাও হে দেখায়ে বুঝায়ে।

মলিন মর্ম মুছায়ে।

(১০)গান-মঙ্গলদীপ জ্বেলে,অন্ধকারে দুচোখ আলোয় ভরো প্রভু

শরৎ সন্ধ‍্যায় বোধন তলায় জ্বলে বোধনের প্রদীপ,

মাগো, তোমার আগমণ আশা দেয় মনে, প্রাণে জ্বালে জ্ঞানদ্বীপ।

তোমার আবির্ভাব দিকে দিগন্তে আলোকের কথা বলে-

তোমার অঞ্জলির মন্ত্রোচারণ অন্তরে অমৃত ঢালে,

তোমার উপস্থিতি প্রতিজ্ঞা দিক, যোঝার শক্তি দিক,

জগৎকে রেখে ভরপুর সুখে, দুখ্ বলিদান নিক,

যারা নুনভাতে খুশি। তাদের মিটুক খিদের জ্বালা।

ওদের খুশির বয়ানে তোমার সাজুক বরণডালা।

প্রিয়জন হারা মানুষের মনে মুছে দিও সব শোক,

তোমার পাদস্পর্শে মাগো শত্রুরও ভালো হোক।

তোমার আগমন অভাব দলে, ভরা সম্পদ আনে,

সবহারা মন এখান থেকেই স্বপ্ন দেখতে নামে।

গরীব ধনীর বিভেদ ভাঙবে এমনই দিনের আশায়, 

সন্ধিপুজো সন্ধি গড়ুক-  মন্দ ভালোবাসায়,

তোমার আসাতেই কু’এর নিধন, কলুষ থরো থরো- 

এবার থেকে ন‍্যায়-প্রতিবাদ জোরালো হোক আরো। 

সেই কোন যুগে এসেছিলে তুমি, আজও কেন আছো দূরে? 

তুমি ছুঁয়ে দিলে দেবী হতো মেয়ে তেজ আর রোদ্দুরে।

তোমার উদ্ভব লড়তে শেখাক, শেখাক অপরাধ দমন,

এ ধরার বুকে নারীই আনুক নারীশক্তির শমন। 

যে ছেলেগুলো প‍্যান্ডেল গড়ে, যারা সাজায় আলো-

মাগো,- ওদের ঘর থাকেনা, খাওয়া জোটেনা ভালো।

তোমার অ’দেখায় ভেসে যায় বুঝি ওদের খুশির জীবন,

মাগো ওদের অভাব ঘুঁচিয়ে, দিও ‘খুশির উদযাপন’।

যে কুমোরটা মূর্তি গড়েছে, যত্নে লেপেছে মাটি-

তার ঘরে গিয়ে ভেস্তে দিও মা অভাবের পরিপাটি।

যে পুরোহিত মন্ত্র পড়েন, শোনান তোমার স্তুতি-

তার আশ্রয়ে রেখে দিও কিছু রুজির প্রস্তুতি,

হে ‘বরদা’ প্রার্থনা করি, একবার দেখে যাও-

পেটপুরে খেতে পায় কি না পায়, যে ঢাকীর বাদ‍্য নাও,

বহুশতকের দুষ্ট দমনের ইতিহাস নিয়ে বুকে-

আর কতকাল সইবো বলো বিলাপ বুক ঠুকে? 

মাগো, সকল অশুভ বিনাশে এনো কুশল ছড়ানো ভোরাই,

যেন, তোমার আগমণী গান গেয়ে যায়– ‘নতুন লালন সাঁই’ ।

(১১)গান-শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী

মাটির প্রতিমা ভেসে যায় জলে,

বিজয়ায় ভেসে যায়…..”

সপ্তমীতে ছাউনিখোলা বারান্দা থেকে দেখেছিলাম -দূরে তুলো ওড়া মেঘ,

নিচে রাস্তা দিয়ে চলেছে জনস্রোত।

আমার বাড়ির ডাইনে-বামে গোটা দশেক পুজো হয়।

তবে আমার মনের ঝোলায় উঁকি মারছে সেই মুখ, সেই ছানিপড়া চোখ, অবিনস্ত সাদা চুল, আটপৌরে মোটা তাঁতেরশাড়ি..।

যে রূপ, আমায় চিনিয়েছে নীলষষ্ঠী, দুর্গাপূজা, পৌষপার্বণ, অরন্ধন, লক্ষ্মীপূজা, শিবরাত্রি….

সেই আটপৌরে শাসন যা- গড়তে শিখিয়েছে।

সেই আটপৌরে আদর- যা মনের ঘরে বসতি গড়ে দিয়েছে- শ্রদ্ধা, সম্মানের।

সেই আটপৌরে মেলামেশায় আজও মাতাল হয়ে থাকি।

মনে হয় একছুট্টে…………….. !

ব‍্যালকনি থেকে ড্রয়িংরুমে আসলাম।

ঘরে ঢুকতে ছেলে বলল – কেমিস্ট্রি বইটা পাচ্ছিনা মা, খুঁজে দাওনা-……দিলাম।

কাজের বৌ কমলা বলল- বৌদি কাজ হয়ে গেছে যাচ্ছি, দরজাটা লাগিয়ে দিও,

….. দিলাম।

শ্বশুরমশাই বললেন- আদা দিয়ে চা করে দিও তো বৌমা,……… দিলাম।

শ্বাশুড়িমা বললেন- একটা পান সেজে দেবে মা?……. দিলাম।

স্বামী বললেন কী করো সারাদিন? দরকারি কথাটা কাকে বলব? …শুনলাম।

পাশের বাড়ির অমলকাকা এসেছেন, তাকেও চা করে দিলাম।

খানিক পরে ফাঁক পেতেই – আবার ব‍্যালকনিতে গিয়ে খুঁজলাম –

ঝাঁকে ঝাঁকে লোক যাচ্ছে ঠাকুর দেখতে, মনটা খাঁ-খাঁ- করে উঠল, 

দেখা পেলাম না মন-ওয়ালার।

বড়ো-বেলার এই জমকাল প্রাণপ্রতিস্ঠিত দেবীর পুজোতে –

কিছুতেই প্রাণ খুঁজে পাই না।

আলো-ঝলমলে নগরীতে- মোটা বাজেটের মোটা পুজো।

কেনা জামাকাপড়ের সঙ্গে -কেনা ফুল, কেনা পুরুত, কেনা কর্মী, কেনা ভক্ত,  কেনা আনন্দ, কেনা আপনজন ।

‘মন’তো। কেনা, বা বিক্রি হয় না।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। হালকা ঠাণ্ডা।

ধীর পায়ে ঘরে ফিরে এলাম, একেবারে খাঁ- খাঁ -শূন‍্য মন নিয়ে।

দুচোখে দুফোঁটা জল নিয়ে –

আটপৌরে ছোটবেলা ডাকে বার বার…….

(১২)নাচ-আজ বাজে মন মাঝে ওই আগমনীর গান

আবার এসো মা,আবার অপেক্ষা বছরভর।আমরা যেমন অপেক্ষা করবো,প্রকৃতিও অপেক্ষায় থাকবে। আগামীর দিনগুলিকে আমরা ভরিয়ে দেবো নানা সাজে,তোমার আসার পথে ঝরিয়ে দেবো শিউলি সুবাস।আমরা ভালো থাকবো,অন্তত ভালো থাকার চেষ্টা তো করতেই পারি।আর,মা,তুমি থেকো আমাদের সকল সুখে,সকল দুঃখে সবকিছুরই অন্তরে।হে মা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দিগন্তটুকু দিও আমাদের,যেখানে সমস্তদিন দুহাতে লিখে রাখতে পারি প্রিয় তোমার নাম, তোমার প্রিয় পদরেখা। নরম শিশুর মতো জল দিও আমাদের, নীলবর্ণ দিঘিটিও দিও যেখানে একটা আস্ত হৃদয় বাস করে।। মানুষের ভালোবাসা পূর্ণ হৃদয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *