মহালয়ার ভোরে দেবীপক্ষের সূচনা হবে,আমরা বাঙালী মেতে উঠবো আগমনী গানে,কবিতায়,ছন্দে।প্রকৃতিও কি আকুল হয়ে মায়ের আগমন প্রার্থনা করছে।দিনগুলিতে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা কিভাবে করবো,তার নতুন আইডিয়া…
![](https://manikkaran10.co.in/wp-content/uploads/2023/10/image-2-1024x537.png)
দিবস: তরুশাখে পাখি সব করিছে কূজন,শারদ আকাশে শুভ্র মেঘের গমন,শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভাসে আকাশের গায়,দুই ধারে কাশ ফুল নদী কিনারায়।শরতের আগমন হেরি বসুধায়, পিয়াস: ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ আমরা গেঁথেছি শেফালীমালা নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা- এসো গো শারদও লক্ষ্মী তোমার শুভ্র মেঘের রথে এসো নির্মল নীলপদ্মে’। দিবস: আজি ধানের খেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলারে ভাই, লুকোচুরি খেলা নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলারে ভাই- লুকোচুরি খেলা।পিয়াস: দেখেছি ভোরের প্রভাত কোনো এক ভোরে দেখেছি দূরে বহুদূরে পূর্বদিগন্ত হতে রক্তিম আগুনের একটি বল জাগবার কথা বলে আর অমনি ঘাসের ডগার উপর শিশির কণাগুলো মুক্তোর দানার মতো উঠে জ্বলে। দিবস: দেখতে পাই শিরিশের ঘুমে নিমগ্ন মুদে থাকা পাতাগুলো প্রজাপতির পাখার মতো পাখা মেলে দেয়। স্বচ্ছ নীল আকাশে চলছে তুলার মতো সাদা মেঘের আনাগোনা। নদীর তীরে তীরে ফুটে উঠেছে কাশফুল। পিয়াস: সকাল-সন্ধ্যা ঘাসের ডগায়, ধানের শীষে শিশির বিন্দু জমে ওঠা। বাতাসে হিমেল অনুভূতি। এ ঋতু নিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘এসেছে শরৎ, হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে।’ দিবস: এসময় নাকে ভেসে আসে শিউলি ফুলের মনমাতানো গন্ধ আর নদীর বালুচরে রাশি রাশি সাদা কাশফুল। কবির কবিতার খাতায় নতুন ছন্দ আসে। গায়কের কণ্ঠে নতুন গানের সুর ওঠে। সে সুর ভেসে যায় বহুদূর পালতোলা নৌকার মাঝির কানে। আনন্দে বৈঠা বেয়ে যায় সে। শরতে সকাল থেকেই এলোমেলো বাতাসে দুলে ওঠে প্রকৃতি। নীল আকশের বুকজুড়ে সাদা মেঘের ভেলা রাশি রাশি সাদা তুলার মতো ভেসে বেড়ায়। যেন তারা ঠিকানাহীন। পিয়াস: আগমনে প্রফুল্ল হৃদয়, পূরব দিশায় হয় অরুণ উদয়।রাঙিল ভুবন আজি অরুণ আভায়, ফুলের সৌরভ ভাসে বাতাসের গায়।ফুল বনে ফুল শাখে ফুটে ফুলকলি, মধু আহরণে আসে গুঞ্জরিয়া অলি।ভোরের আলোয় মুক্ত নিশির শিশির দূর্বাদল-বৃন্ত হতে ঝরে ঝির ঝির। দিবস: রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘমুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরতের এ সময়টা শস্যপূর্ণা। ধানক্ষেত এ সময় ফল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। মাস দু–এক পরেই কৃষকের গোলা ভরবে ধানে। পিয়াস: মাগো তুমি আসবে বলে.. হৃদয় জুড়ে খুশির লহর ও মা তোমার পথ চেয়ে আমি শুধুই গুনি প্রহর,জানি মা তুমি আসছ তাই তো মেঘেদের আনাগোনা। মাঠে মাঠে তাই কাশফুল ফোটে ভোরের ঘাসে শিশিরকনা …
দিবস: মাগো তোমার আগমনী সুর তোলে প্রাণে এক হিল্লোল –খুশিতে বিভোর বসুন্ধরা আবেগে বিহ্বল !মাগো তোমার মধুর রূপে মজে যায় ত্রিভূবন !মৃন্ময়ী তুমি কৃপা কর সবে এই বলি সারাক্ষণ !অশুভ থেকে শুভ’র দিকে আঁধার থেকে আলোকে …মৃত্যুর থেকে অমৃতের পথে ! নিয়ে চল মাগো তব জয়রথে। পিয়াস: আকুল মনপবনে ..তব পদধ্বনি বাজে ;এলে সুনয়না মধুর বেশে ভরালে এ মন অধীর আবেশে !শিশিরকণায় শেফালীকা ফুলে.তোমার সে রূপে সবই গেছি ভুলে !পরমা প্রকৃতি শক্তিস্বরূপা.ভবানী মা তুমি জগদম্বিকা !মৃণ্ময়ী নও চিন্ময়ী মাগোনা প্রকৃতির মাঝে তুমি সদা জাগো !হৃদয় আলয়ে তোমার শোভা তোমার মূর্তি বড় মনোলোভা ! মনের অসুর দমন করে ,তোমায় প্রণমি ও মা করজোড়ে !দেবীপক্ষের এ মহাতিথিতে এসো এসো মাগো এই ধরণীতে …তোমার ধেয়ানে তোমার স্তুতিতেহল মহালয়া এই পৃথিবীতে। দিবস: ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথিক এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ কিরণ রথে পিয়াস: শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত। আকাশতলে অনিলে-জলে, দিকে-দিগঞ্চলে,সকল লোকে, পুরে,বনে-বনান্তরে নৃত্যগীতছন্দে নন্দিত। শরৎপ্রকৃতি উল্লাসি তব গানে চিরসুন্দর চিরসুন্দর চিতসুন্দর বন্দনদানে ত্রিলোকে যোগে সুরন্ময়ী আনন্দে। মহাশক্তিরূপা মঞ্জুলশোভা জাগে আনন্দে মা যে কল্যাণী সদা রাজে,সদা সুখদা, সদা বরদা, সদা জয়দা, ক্ষেমঙ্করী, সুধা, হ্রদে। অসুরদশন দশপ্রহরণভুজা রাগে রণিত বীণাবেণু, মধু ললিত শমিত তানেশুভ আরতি ঝঙ্কৃত ভুবনে নবজ্যোতি রাগে,জ্যোতি অলঙ্কারে তানে তানে ওঠে গীতি, সুধারসঘন শান্তি ঝন ঝন জয়গানে। দিবস: সবুজ তরুর শাখে পাখি সব বসে থাকে প্রভাতের আগমনী গায়,সোনা ঝরা রোদদুরে বাজে বাঁশি মিঠে সুরে মাঝি সব মাদল বাজায়।সবুজ ধানের খেতে প্রভাত হাওয়া মেতে ঢেউ লাগে দিয়ে যায় দোলা,অজয়ের নদীজলে বৈঠা বেয়ে মাঝি চলে নৌকাখানি সাদাপাল তোলা।দেবীর মন্দির মাঝে ঢাক ঢোল কাঁসি বাজে পূজোর সময় এল কাছে, চতুর্দিকে হাঁক ডাক ঢাকীরা বাজায় ঢাক আনন্দে হৃদয় মোর নাচে।
দুর্গা মায়ের ৭টি কবিতা (১) ওগো আমার আগমনী আলো ওগো আমার আগমনী আলো, জ্বালো প্রদীপ জ্বালো। এই শারদের ঝঞ্ঝাবাতে নিশার শেষে রুদ্রবাতে নিভল আমার পথের বাতি নিভল প্রাণের আলো। ওগো আমার পথ দেখানো আলো জীবনজ্যোতিরূপের সুধা ঢালো ঢালো ঢালো। দিক হারানো শঙ্কাপথে আসবে, অরুণ রাতে আসবে কখন আসবে, টুটবে পথের নিবিড় আঁধার, সকল দিশার কালো। বাজাও আলোর কণ্ঠবীণা ওগো পরম ভালো।
(২) বাজলো তোমার আলোর বেণু বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন। আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন। অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে, অরুণ বীণায় সে সুর বাজে; এই আনন্দ যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ। আজ সমীরণ আলোয় পাগল নবীন সুরের বীণায়, আজ শরতের আকাশবীণায় গানের মালা বিলায়। তোমায় হারা জীবন মম, তোমারি আলোয় নিরুপম। ভোরের পাখি উঠে গাহি তোমারি বন্দন।
(৩) খড়ের প্রতিমা পূজিস খড়ের প্রতিমা পূজিস রে তোরা, মা-কে তো তোরা পূজিস নে। প্রতি মা-র মাঝে প্রতিমা বিরাজে, হায় রে অন্ধ বুঝিস নে, মা-কে তো তোরা পূজিস নে। বছর-বছর মাতৃপূজার ক’রে যাস অভিনয়, ভীরু সন্তানে হেরি লজ্জায় মা-ও যে পাষাণময়। মা-কে জিনিতে সাধন-সমরে সাধক তো কেহ যুঝিস নে, মা-কে তো তোরা পূজিস নে। মাটির প্রতিমা ডুবে যায় জলে বিজয়ায় ভেসে যায়, আকাশে বাতাসে মা’র স্নেহ ভাসে অতন্দ্র করুণায়| তোরই আসেপাশে, তাঁর কৃপা ভাসে কেন সেই পথে তাঁকে খুঁজিস নে, মা-কে তো তোরা পূজিস নে।
(৪) শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী শিউলি ঝরানো দিন আনে সে শিউলি ঝরানো দিন আনে সে চিরদিনের বাণী, ভোরের আগমনী.. শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী । সোনার আলোয় জাগবে পৃথিবী বাজবে আলোর বাঁশি সোনার আলোয় জাগবে পৃথিবী বাজবে আলোর বাঁশি আকাশ পটে মহামায়ার, ভুবন মোহিনী হাসি । দিকে দিকে আজ উঠবে বেজে দিকে দিকে আজ উঠবে বেজে, মায়ের পদধ্বনি । শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী । বিশ্ব আজিকে ধ্যানমগ্না উদ্ভাসিত আশা বিশ্ব আজিকে ধ্যানমগ্না উদ্ভাসিত আশা , তাপিত তৃষিত ধরায় জাগবে, প্রাণের নতুন ভাষা । মৃন্ময়ী মা আবির্ভূতা মৃন্ময়ী মা আবির্ভূতা অসুরবিনাশিনী শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী শিউলি ঝরানো দিন আনে সে শিউলি ঝরানো দিন আনে সে চিরদিনের বাণী, ভোরের আগমনী.. শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী ।
(৫) আগমনী প্রেমেন্দ্র মিত্র বর্ষা করে যাব, যাব, শীত এখনও দূর, এরই মধ্যে মিঠে কিন্তু হয়েছে রোদ্দুর। মেঘগুলা সব দূর আকাশে পারছে না ঠিক বুঝতে, ঝরবে, নাকি যাবে উড়ে অন্য কোথাও খুঁজতে! থেকে থেকে তাই কি শুনি বুক-কাঁপানো ডাক? হাঁকটা যতই হোক না জবর মধ্যে ফাঁকির ফাঁক! আকাশ বাতাস আনমনা আজ শুনে এ কোন ধ্বনি, চিরনতুন হয়েও অচিন এ কার আগমনী।
(৬) আজি শঙ্খে শঙ্খে আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে দ্বারে সপ্তসিন্ধু কল্লোলরোল বেজেছে সপ্ততারে। সুর সপ্তক তুলেছে তান সপ্ত ঋষির গানে সপ্তসর্গে দুন্দুভি ঘোষে সপ্তগ্রহের টানে। অন্তরে আজ সপ্তদলের নবজাগরণ সারে। ওগো জননী এসেছে দ্বারে। সাতরাঙা রবি রামধনু হাতে পরণের বাণ হানে সপ্তকোটি সুসন্তান বিজয়মাল্য আনে সপ্ততীর্থ এক ই সাথ হয়ে রীতিমন্দির দ্বারে তুলে নাও বুকে তারে ওগো জননী এসেছে দ্বারে।
(৭) এসেছিস মা থাক না এসেছিস মা, থাক না মাগো দিনকতক, হয়েছিস ডাগরডোগর এখন কিসের ভয় এত। বলিস যদি, আনি মা জামাই সকালে লোক কৈলাসে পাঠাই, সবাই মিলে করব যতন যোগাব তার মনমতো। খল-কপট নাই কো তার মনে যে যা খুশি দেবে তার সনে, মান-অভিমান তার মনে নাই কুচুটে তো তুই যত। এখন বুঝি ঘর চিনেছিস তাই হয়েছি পর, তখন কেঁদে ভাসিয়ে দিতিস নিতে গেলে হর, সঁপে দিছি পরের হাতে নাই কো আমার জোর তত।