অনুষ্ঠানের ব্লু-প্রিন্ট

  • অনুষ্ঠানের তারিখ:২৬-শে সেপ্টেম্বর
  • অনুষ্ঠানের স্থান ও প্রতিষ্ঠানের নাম: সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
  • সঞ্চালক ২জন : ১জন পুরুষ + ১জন মহিলা।
  • অতিথি বর্গের নাম পারলে মনে রাখা ও কার কোন নাম চিনে রাখা উচিৎ।

যদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে তবে, অনুষ্ঠানের ২টি পর্যায়

প্রথম পর্ব- মূলত বক্তব্যধর্মী

  • সঞ্চালকের প্রারম্ভ কথা।
  •  বিদ্যাসাগর -এর প্রতিকৃতিতে/আবক্ষ মূর্তিতে/ পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে মাল্যদান/পুষ্পার্ঘ্য প্রদান। মূর্তি উন্মোচনও হতে পারে।
  • বক্তব্য।(একে একে)
  • অতিথিদের বরণ পর্ব।

সভাপতি/প্রধান অতিথি/ বিশেষ অতিথি

  • কোনো ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান।
    • সভাপতি/সঞ্চালকের ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সমাপ্তি ভাষণ।

দ্বিতীয় পর্ব- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 

  • উদ্বোধনী সঙ্গীত/নৃত্য 
  • লিস্ট অনুযায়ী আবৃত্তি /সঙ্গীত/ নৃত্য/নাটক/মূকাভিনয় /যোগা 

(লিস্টের গান, কবিতা, নাচের বিষয়বস্তুর দিকে খেয়াল রেখে স্ক্রিপ্ট লেখা।)

  • সমাপ্তি সঙ্গীত। 


প্রথম পর্যায়ের অনুষ্ঠানের নমুনা  

অনুষ্ঠানের প্রারম্ভ কথা

দিবস:

অক্ষরের মাঝে আছো তুমি বর্নপরিচয়ে,

সোজা শিরদাঁড়ায় আছো, আছ বরাভয়ে।

সেতুতে আছো, হেতুতে আছো, হাজার নামের ভীড়ে।

দাঁড়িয়ে আছো আজও তুমি জ্ঞানের সাগর তীরে।

দয়ার সাগর, দানের সাগর, জ্ঞানের সাগর তুমি।

দুশো বছর পেরিয়ে এসেও তাইতো তোমায় নমি।

বীরসিংহের সিংহ শিশুর জগৎ জোড়া নাম,

তোমার জন্যে ধন্য হল বীরসিংহ গ্রাম।

মায়ের টানে সাঁতরে নদী এলে তুমি বাড়ি,

তোমার সেবায় হার মেনেছে কলেরা মহামারী।

সাধারণের বেশভূষাতে চাদরে খদ্দরে,

মোট বয়েও শিক্ষা দিলে মানব সাগর তীরে।

দেশে তখন বড্ড অভাব, ভাত জোটে না মোটে,

তখন অন্নসত্রে অভুক্তদের মুখে হাসি ফোটে।

পিয়াস:

বাঙালী জাতির জনক তুমি, নতুন যুগের দূত,

তোমার জাদুতে পালিয়ে গেল কুসংস্কারের ভূত।

বিধবাবিবাহ চালু হল, খুললো মেয়েদের স্কুল,

নারীমূক্তির পথ চলাতে ভাঙলে সবার ভুল।

শিক্ষার দীপ জ্বলছে যখন সারা বাংলা জুড়ে,

পরমহংস মিললো এসে সেই সাগরের তীরে।

গ্রামে গ্রামে পাঠশালাতে মেয়েরা এলো পড়তে,

শিক্ষিত মায়েরাই পারে সোনার ভারত গড়তে।

“সংস্কৃত যন্ত্রে” তোমার ছাপলো হাজার বই,

আজও তোমার সৃষ্টিতে তাই বিভোর হয়ে রই।

তোমার সেবায় ধন্য হল কার্মাটাড়ের ভূমি,

বঞ্চিত সেই মানুষগুলোর ঈশ্বর তো তুমিই।

দিবস:

এমন একটা সময় ছিল,যখন সমাজ অনুশাসন ছিল উৎপীড়নের হাতিয়ার ,যখন প্রবলের অত্যাচার সীমাহীন,দু্র্বলের অসহায় আর্তনাদ,যখন অনাচার কুসংস্কারের অক্টোপাস বন্ধন- তখন এক ব্রাহ্মন সিংহশিশু জন্মেছিলেন।

পিয়াস:

হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। গোটা জাতিই আদর করে নাম দিয়েছিল “করুণার সিন্ধু”।তাঁর বিস্ময়কর অধ্যবসায় তাঁকে “বিদ্যাসাগর” রূপে অভিনন্দিত করেছিল।

দিবস:

আজকে এমন পুণ্যদিনে প্রণাম জানাই বিদ্যাসাগর

আর একবার হে সারথি, রশি ধরো এ সভ্যতার

জেগে থেকো আত্মা জুড়ে সমাজব্রতী,দীনের নাথ,

কেবল তুমি আছো বলেই আছে মাথার ওপর অনন্ত ছাদ্।

পিয়াস:

তুমি আছো বলেই আজও গভীর নিবিড় বর্ণমালা

সন্দিপনী পাঠশালাতে ভুবনমালা – কুন্দমালা 

তুমি আছো বলেই সাদা থানের বুকে পলাশ ফোটে

হাজা মজা দহের বুকে জীবন জয়ের তুফান ওঠে

দিবস: নমস্কার আমি দিবস।

পিয়াস: নমস্কার আমি পিয়াস।

অনুষ্ঠানে প্রবেশ

দিবস:

আজ এই পুণ্যদিনের মহতী অনুষ্ঠানে আমরা সমবেত হয়েছি,যুগপুরুষ বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানাবো বলে।তাঁর কথা, তাঁর জীবন চর্যা নতুন করে আমাদের জীবন বোধকে উন্নত করবে,এই আশা নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করছি।

পিয়াস:

 যাঁরা অনুষ্ঠানে এসে আমাদের হৃয়কে আলোকিত করেছেন,আমাদের গৌরবান্বিত করেছেন – তাদের সকলকে জানাই একবুক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।প্রণাম।

দিবস:

মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট সকল দর্শক মন্ডলী,শুভানুধ্যায়ী গণ কে প্রতিষ্ঠানের (নাম)/ক্লাবের (নাম) পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

বরণ পর্ব(একই সাথে উদ্বোধনী সঙ্গীত রাখা যেতে পারে)

পিয়াস :

এখন চোখে চোখ রাখার পালা।আমরা মঞ্চে ডেকে নিচ্ছি…..১)………..২)……..৩)…….৪)…….৫)……

[আলাদা আলাদা করে নাম ধরে কিংবা একসঙ্গে ]

সকল গুণীজনদের মঞ্চের নির্দিষ্ট আসনে উপবেশনের অনুরোধ জানাই। 

দিবস:

আমরা এবার আজকের অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথি বর্গকে বরণ করে নেবো।

(আলাদা আলাদা নাম ডেকেও করা যেতে পারে)

পুষ্পস্তবক ,ব্যাজ ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নিচ্ছে……

  • এখানেই উদ্বোধনী সঙ্গীতের ঘোষণা হতে পারে।

পিয়াস:

আমাদের এই সামান্য আয়োজন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার জন্য আমি…… মহাশয়ের নাম প্রস্তাব করছি।

দিবস:

আমি এই প্রস্তাব সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি।

[এই ভাবে বিশেষ অতিথি,প্রধান অতিথির নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করা যেতে পারে]

এরপর বিদ্যাসাগর -এর প্রতিকৃতিতে/আবক্ষ মূর্তিতে/ পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে মাল্যদান/পুষ্পার্ঘ্য প্রদান। মূর্তি উন্মোচনও হতে পারে।

এখানেই প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শেষ হতে পারে



দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে প্রবেশ

দিবস:
জীবনের কাছে আমাদের অসীম দেনা।এ জীবন আমার নয়।এ ভালোথাকা আমার নিজের কারণে নয়।এ জীবনপথের বাঁকে বাঁকে অসংখ্য যুগপুরুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ উষ্ণ আলিঙ্গনের ফল – আজ আমাদের এই বেঁচে থাকা।অসামান্য হৃদয়-বর্ণালীর কোমল প্রবাহ দিয়ে তাঁরা আমাদের জন্য বিছিয়ে রেখেছেন শীতলপাটি।বর্তমান সময়ের একবুক দাবদাহেও এই শীতলপাটির ওম্ চারিয়ে যায় শরীর,মনে। আমরা বেঁচে থাকি , ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাবার স্বপ্ন দেখি।

পিয়াস:
আমি অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায় সভাপতি মহোদয়কে অনুরোধ করবো তাঁর স্বাগতভাষণ দেওয়ার জন্য।

অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একসঙ্গে থাকলে

এখন সঙ্গীতের সুরসঙ্গমে ঘোষিত হোক আজকের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুভ উদ্বোধন।
পরিবেশনে……..

উদ্বোধনী সঙ্গীত

[দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ক্রম পাওয়ার জন্য, পরের পোস্ট ফলো করুন ]

এই দিবসের উপযোগী কিছু কবিতা
(পরের পোস্টে আরো বেশ কিছু কবিতা থাকবে)

সাগরদীপ বিদ্যাসাগর
সুমন বিশ্বাস

মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছো ইস্কুলে ইস্কুলে।
ছবি হয়ে আছো তুমি দেওয়ালে দেওয়ালে।
অক্ষরের মাঝে আছো তুমি বর্নপরিচয়ে,
সোজা শিরদাঁড়ায় আছো, আছ বরাভয়ে।
সেতুতে আছো, হেতুতে আছো, হাজার নামের ভীড়ে।
দাঁড়িয়ে আছো আজও তুমি জ্ঞানের সাগর তীরে।
দয়ার সাগর, দানের সাগর, জ্ঞানের সাগর তুমি।
দুশো বছর পেরিয়ে এসেও তাইতো তোমায় নমি।
বীরসিংহের সিংহ শিশুর জগৎ জোড়া নাম,
তোমার জন্যে ধন্য হল বীরসিংহ গ্রাম।
মায়ের টানে সাঁতরে নদী এলে তুমি বাড়ি,
তোমার সেবায় হার মেনেছে কলেরা মহামারী।
সাধারণের বেশভূষাতে চাদরে খদ্দরে,
মোট বয়েও শিক্ষা দিলে মানব সাগর তীরে।
দেশে তখন বড্ড অভাব, ভাত জোটে না মোটে,
তখন অন্নসত্রে অভুক্তদের মুখে হাসি ফোটে।
বাঙালী জাতির জনক তুমি, নতুন যুগের দূত,
তোমার জাদুতে পালিয়ে গেল কুসংস্কারের ভূত।
বিধবাবিবাহ চালু হল, খুললো মেয়েদের স্কুল,
নারীমূক্তির পথ চলাতে ভাঙলে সবার ভুল।
শিক্ষার দীপ জ্বলছে যখন সারা বাংলা জুড়ে,
পরমহংস মিললো এসে সেই সাগরের তীরে।
গ্রামে গ্রামে পাঠশালাতে মেয়েরা এলো পড়তে,
শিক্ষিত মায়েরাই পারে সোনার ভারত গড়তে।
“সংস্কৃত যন্ত্রে” তোমার ছাপলো হাজার বই,
আজও তোমার সৃষ্টিতে তাই বিভোর হয়ে রই।
তোমার সেবায় ধন্য হল কার্মাটাড়ের ভূমি,
বঞ্চিত সেই মানুষগুলোর ঈশ্বর তো তুমিই।
বাংলা জুড়ে গড়েছো তুমি কত যে ইস্কুল,
সে পাঠশালায় বর্ষে বর্ষে ফুটেছে কত ফুল।
কঠিন ছিল তোমার লড়াই আঁধার দিনের কালোয়।
আলোকিত করেছো তুমি তোমার মনের আলোয়।
শিক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়েছিলে গ্রামে গ্রামান্তরে।
তাই, অমর হয়ে থাকবে তুমি বাঙালির অন্তরে।
তবুও তোমার মূর্তি ভাঙে দুর্বৃত্তের দল,
এসব দেখে বাঙালিজাতির চোখে আসে জল।
তুমি এদের ক্ষমা করো, এদের নেই শিক্ষার আলো।
আবার তুমি ফিরে এসে শিক্ষার দীপ জ্বালো।

বলি ও বিদ্যাসাগর
সুমন বিশ্বাস

বলি ও বিদ্যাসাগর? কী করে পারলে গো?
বয়স তখন নয় বছর বটেক,
বাপের সাথে চললে কোলকেতে,
রাস্তায় শিল পোঁতা দেখে শিখে নিলে ইংরিজি নাম্বার।
সেই ছোটবেলাতেই ত্যাজ ঠাওর করেছিলেন বাবা ঠাকুরদাস।
বীরসিংহের সিংহ শিশুই বটেক,
পড়াশোনা শিখে বিদ্যাসাগর অনেকেই হয়েছে,
কিন্তু তোমার পারা কাউরে চোখে পড়ে না।
এই ধর, তুমি যদি বর্ণপরিচয় না লিখতে,
তাহলে আমরা তো অক্ষরই চিনতে লারতাম।
বাংলা গদ্য তো তুমার হাতেই পিরাণ পেলো।
বলি ও বিদ্যাসাগর? কীকরে পারলে গো?
মেয়েদের ইস্কুলে পেঠিয়ে ঠুলি খোলা কি সহজ কতা?
আর বিধবাদের আবার বিয়ে দেওয়া!
সে কী করে পারলে গো?
এতো ত্যাজ তুমি কুতা থেকে পাইলে গো?
মা ভগবতী তোমায় পেটে ধরেছিলো তাই!
না হলে দেশের এই কালো আঁধার ঘুচোতো কে শুনি?
তা হ্যাঁ গো বিদ্যাসাগর, শুনেছো?
তুমার মূর্তি নাকি উয়ারা গুড়িয় দিলো!
একবার হাতটাও কাঁপলো না গো!
যে মানুষটা একখান খড়ম আর কাপড় পড়ে জীবন কাটিয়ে দিলো,
এত এত বিদ্যালয় খুললো, তার কিনা এই প্রতিদান!
হ্যাঁ গো, বিদ্যাসাগর আবার একটি বার এসো ক্যানে!
এখনও তো পাড়া গাঁয়ে বাল্যবিবাহ হচ্চে গো।
বিটি মাইয়ারা এখনও নাকি বোঝা।
তাই বাপে মায়ে বিটিদের তো বিয়ে দিতে পারলে বেঁচে যায়।
তুমি একবার এসো দিকি, আবার একটা লড়াই তোমায় লড়তে হবেক।
তুমার পারা একজন মানুষ খুব দরকার বটেক।
সমাজটোকে সবক শিখাতে তুমি ছাড়া আর কে পারবেক শুনি?
বলি ও বিদ্যাসাগর ? তাহলে তুমি আসছো তো ?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বঙ্গসাহিত্যের রাত্রি স্তব্ধ ছিল তন্দ্রার আবেশে
অখ্যাত জড়ত্বভারে অভিভূত। কী পুণ্য নিমিষে
তব শুভ অভ্যুদয়ে বিকীরিল প্রদীপ্ত প্রতিভা,
প্রথম আশার রশ্মি নিয়ে এল প্রত্যুষের বিভা,
বঙ্গভারতীর ভালে পরালো প্রথম জয়টিকা।

রুদ্ধভাষা আঁধারের খুলিলে নিবিড় যবনিকা,
হে বিদ্যাসাগর, পূর্ব দিগন্তের বনে-উপবনে
নব উদ্ বোধনগাথা উচ্ছ্বসিল বিস্মিত গগনে।
যে বাণী আনিলে বহি নিষ্কলুষ তাহা শুভ্ররুচি,
সকরুণ মহাত্ম্যের পুণ্য গঙ্গাস্নানে তাহা শুচি।
ভাষার প্রাঙ্গণে তব আমি করিব তোমারি অতিথি,
বারতীর পূজাতরে চয়ন করেছি আমি গীতি
সেই তরুতল হতে যা তোমার প্রসাদসিঞ্চনে
মরুর পাষান ভেদি প্রকাশ পেয়েছে শুভক্ষণে।



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *